গত ০৮ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ আনুমানিক ১৪.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর মহানগরীর গাছার’ মোঃ আব্দুল কাদের এর বাসা হতে শিশু আব্দুল্লাহ(০৫) অপহৃত হয়। গত ০৭ জুলাই ২০২০ ইং অপহরণকারীরা গাছা¯র মোঃ আব্দুল কাদের এর বাড়িতে ২০০০/- টাকা মাসিক বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। ভাড়া বাসায় উঠার পর দিন অর্থাৎ গত ০৮ জুলাই ২০২০ ইং অপহরণকারীরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে দুপুর আনুমানিক ২ ঘটিকার সময় বাসার মালিক মোঃ আব্দুল কাদের এর স্ত্রী মোসাঃ সাজেদা আক্তার এর কাছে থেকে তার শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ(০৫) কে কোলে নিয়ে মজা ক্রয় করে দেওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে অনুমান দেড় ঘন্টা পর অপহরণকারীরা ভিকটিমের মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপণ স্বরুপ ০৭ লক্ষ টাকা দাবি করে, অন্যথায় তাদের শিশু সন্তানের কিডনি বিক্রি করার পর হত্যার হুমকি দেয়।
ভিকটিমের পরিবার অপহৃত শিশু সন্তানকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১ এর নিকট আইনগত সাহায্য কামনা করলে অধিনায়ক র্যাব-১ লেঃ কর্ণেল শাফী উল্লাহ বুলবুল, বিএসপি, বিজিবিএমএস, পিবিজিএমএস এর নির্দেশে তাৎক্ষনিকভাবে অপহরণকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়ঃ গত ১০ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ আনুমানিক ২৩.৩০ ঘটিকায় র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল ০৫ ঘন্টা সফল অভিযান পরিচালনা করে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন সাইনবোর্ড এলাকায় হতে এই অপহরণকারী চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী ১। মোঃ আমির হোসেন সাগর(৩৯), পিতা-মৃত সামসুর রহমান, সাং-উল্লা, থানা-লোহাগড়া, জেলা-নড়াইল, এ/পি-গাছা মধ্যপাড়া, থানা-গাছা, জিএমপি, গাজীপুরকে আটক করে। তার দেয়া তথ্যমতে র্যাব ভিকটিম আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই অপহরণের সাথে জড়িত অপর আসামী ২। মোঃ আজম শেখ(৩০), পিতা-মৃত খোরশেদ শেখ, সাং-পাটগাতী, থানা-লোহাগড়া, জেলা-নড়াইল’কে আটক করতে সক্ষম হয়। র্যাব ভিকটিম উদ্ধার এবং এই অপহরণের অপর সহযোগী অজ্ঞাতনামা মহিলাকে গ্রেফতারের জন্য কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। গাজীপুর ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে উক্ত অপহরণকারী মহিলা ভিকটিম আব্দুল্লাহ(০৫) কে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ার ভয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার কাঁঠালবাড়ী ফেরী ঘাট এলাকায় ভিকটিম আব্দুল্লাহ কে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম আব্দুল্লাকে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় সোর্পদ্দ করে। অবশেষে র্যাব মূল পরিকল্পনাকারী আসামী আমির হোসেন সাগর সহ ০২ জনকে আটক করে চাঞ্চল্যকর এই অপহরণের রহস্য উদঘাটন করে।
ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘ দিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অপহরণ, অজ্ঞান করে লুটবাজ সহ নানাবিধ অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। র্যাবের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা আরো জানায় যে, এ কাজে সহায়তার জন্য তাদের একাধিক স্ত্রী রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ধনী পরিবারদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বাসায় এসব তথামহিত স্ত্রীদের দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় তারপর বাসার মালিকদের সাথে সুসম্পর্ক হওয়ার পর সুযোগ বুঝে বা”চা অপহরণ, নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে বাসা লুট, নগ্ন ছবি তুলে বাড়ীর মালিকদের জিম্মি সহ দুর্ধর্ষ কাজ করে আসছে বলে তারা স্বীকার করে। তারা পরস্পর যোগসাজসে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ধৃত আসামী আমির হোসেন সাগর তার ৫ম স্ত্রী দ্বারা শিশু আব্দুল্লাহ কে অপহরণ করেছিল বলে জানায়। ধৃত আসামীরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল যেকোন উপায়ে বিপুল টাকা উপার্জন করে গাজীপুর শহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা ক্রয় করে সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করবে। তাদের এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তারা এই অপহরণ করেছে বলে স্বীকার করে এবং তারা ধনী পরিবারের শিশুদেরকে টার্গেট করে উক্ত কার্যক্রম করতে থাকে।
এ বিষয়ে জিএমপি গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার নম্বর-১৫ তারিখ ০৮/০৭/২০২০ খ্রিঃ ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনীয় ২০০৩) এর ৭/৮।